শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
পুলিশের ভুল ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিনা অপরাধে ২বছর ৩মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছে শফি উল্লাহ (৬০) নামের এক আসামী। শফি উল্লাহ ঈদগাঁও উপজেলার দক্ষিন মেহের ঘোনা এলাকার সৈয়দ আমিরের ছেলে। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালত তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। একই সাথে তৎকালিন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এএসআই লিটনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের এএসআই লিটনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে একটি ডাকাতি মামলার আসামী ঈদগাঁও উপজেলার মেহের ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শফিউল আলমের বদলে একই এলাকার সৈয়দ আমিরের ছেলে শফি উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালত শফি উল্লাহকে (এসটি মামলা নং- ২১২/২০০৩ইং) কারাগারে প্রেরণ করেন। সে থেকে শফি উল্লাহ কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ৭ মার্চ কক্সবাজার জেল সুপার সাক্ষরিত একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের দৃষ্টিগোচর করা হয়। উক্ত আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে কারান্তরীন শফি উল্লাহ আসল আসামী নন। আসল আসামী হচ্ছেন একই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শফিউল আলম (৫০)। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের এসআই আবু রায়হান দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে গ্রেপ্তারের সময় নেতৃত্ব দেয়া তৎকালিন পুলিশের এএসআই লিটনের বিরুদ্ধে ভুল ও দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু, ইতিমধ্যে উক্ত মামলার অন্যান্য আসামীদের জামিনের বিষয়ে মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে চলে যান। এজন্য চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের রেজিষ্টার বরাবর চিঠি দেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত। এরই অংশ হিসাবে বিনা অপরাধে কারাগারে আটক শফি উল্লাহর বিষয়টি গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করেন কক্সবাজার জেল সুপার। আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন হাইকোর্টের রিজিষ্টারের কাছে পুনরায় চিঠি দেন। দীর্ঘ সময়েও হাইকোর্ট থেকে কোন উত্তর না আসায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমালকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল অতিরিক্তি দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেন। পরে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন মামলাটি ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে শফি উল্লাহকে জামিনের আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে শফি উল্লাহকে ভুলভাবে যথাযত যাচাই-বাছাই না করে দন্ডিত পলাতক অভিযুক্ত ‘শফিউল আলম’ হিসাবে আটক করে আদালতে প্রেরণ করার বিষয়টি কর্তব্যে অবহেলার গণ্যে এএসআই লিটনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক আদালতকে অবহিত করার জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। আদেশের অনুলিপি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রেজিষ্টার জেনারেল, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ডিআইজি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে পাঠানো হয়।
ভয়েস/আআ